সূচিপত্র

ভারতের মৃত্তিকা/ভূমি ক্ষয়ের কারণগুলি আলোচনা কর:

মৃত্তিকাক্ষয়: বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে মৃত্তিকা ক্ষয়কার্য কার্য হয়। যেমন– হিমবাহ, জলপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, প্রভৃতি কারণে এবং মনুষ্য সৃষ্ট অন্যান্য কার্যকলাপের ফলেও মাটির উপরের অংশ আলাদা হয়ে অপসারিত হয় এবং মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।

মৃত্তিকা কারণগুলি:

মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণগুলিকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা যায— (১)প্রাকৃতিক কারণ ও (২)মানুষ্য সৃষ্ট কারণ

A প্রাকৃতিক কারণ:

  • (১)জলপ্রবাহ- তীব্র জলপ্রবাহের ফলে মৃত্তিকা যে ওপরের স্তর ক্ষযকার্য হয়। ভূমির ঢাল বারবার প্রসারিত হয়ে নদীর জলস্রোতের কারণে মৃত্তিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
  • (২) বায়ুপ্রবাহ: হালকা এবং শুষ্ক মাটির উপর দিয়ে বায়ুপ্রবাহ হওয়ার কারণে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়হ
  • (৩) হিমবাহ দ্বারা ক্ষয়কার্য: পার্বত্য সংলগ্ন অঞ্চলে হিমবাহ ক্ষয়কার্যের ফলে ও মাটি প্রাপ্ত হয়। এবং সমুদ্র তরঙ্গের কারণে উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমুদ্র তরঙ্গের আঘাতে মাটি ব্যাপকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে।
  • (৪) বৃষ্টিপাত: বায়ুমণ্ডল থেকে সমবেগে নামতে থাকা বৃষ্টিপাতের ফোঁটা সরাসরি মাটিকে আঘাত করে এবং মাটির যে গঠন সেটি ধ্বংস হয়ে যায়, এবং আলগা হওয়ার ফলে সহজ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
  • (৫)ভূপ্রকৃতি: পৃথিবীবৃষ্টি যে সকল অঞ্চলে ভূমির ঢাল সর্বাধিক বেশি থাকে, সে সমস্ত অঞ্চলে মাটির দানা দ্রুত অপরিচিত হওয়ার ফলে ভূমিক্ষয় বেশি পরিমাণে হয়। এবং এই কারণেই পার্বত্য অঞ্চলে বেশি পরিমাণে ভূমিকায় দেখা যায়।
  • (৬) নদীর পাড় ভাঙ্গন ও ধস: এবং নদীর তীরের অংশ নদী প্রবল জলোচ্ছ্বাস কারণে নদীর দুই পাড়ের মাটি ক্ষয় করে।

B মনুষ্য সৃষ্ট কারণ:

  • (১) অনিয়ন্ত্রিত বৃক্ষ ছেদন: উদ্ভিদের শেকর মাটিকে যেমন আগড়ে ধরে রাখে, সেরকম গাছের পাতা বৃষ্টির আঘাত থেকে মাটিকে রক্ষা করে থাকে। কিন্তু মানুষ নিজেদের চাহিদার জন্য ব্যাপকভাবে বৃক্ষ ছেদন করে চলেছে ফলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ খুবই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • (২) অবৈজ্ঞানিক কৃষি পদ্ধতি: মাটিতে বিভিন্ন রকম চাষের জন্য যেমন ট্রাক্টর, হারভেস্টার, নাঙ্গল, প্রভৃতি ত্যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং স্থানান্তর কৃষিকার্যে ফলেও মৃত্তিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
  • (৩) অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ: অনিয়ন্ত্রিত পশুচরণের মাধ্যমে তৃণভূমির তৃণ্ নির্মূল হচ্ছে। এবং এর ফলে মাটি আলগা হয়ে যাচ্ছে।
  • (৪) অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্মাণ ও খননকার্য:
  • সেতু নির্মাণ, রাস্তাঘাট, ইটভাটা, বাঁধ নির্মাণ বাড়ি তৈরি, পুকুর, খাল প্রকৃতি নির্মাণের ফলে মাটি ব্যাপকভাবে কয় প্রাপ্ত হচ্ছে।
  • (৫) ভূমিধস বৃদ্ধি: রাস্তা নির্মাণ এবং বৃক্ষ ছেদন প্রভৃতি কারণে পাহাড়ি ঢালে ধ্বস নামলে ব্যাপক মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।
  • (৬) জনসংখ্যার চাপ: বর্তমানে জনসংখ্যা চাপের কারণে নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে মাটি বিভিন্নভাবে দূষণের সঙ্গে মাটির অবঘর্ষ বা অবনমন প্রক্রিয়া ঘটে চলেছে।
  • (৭) অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খননকার্য: খনিজ ভান্ডার গুলিতে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খনন কার্যের ফলে সেখানকার মাটিও খুবই পরিমাণে ক্ষয়কার্য হচ্ছে।

মৃত্তিকা ক্ষয় ফলাফল–

সমুদ্র তরঙ্গ, বায়ুপ্রবাহ, এবং প্রবাহমান জলধারা ঝড়-বৃষ্টি, জনসংখ্যা চাহিদা মেটানোর জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ, বাড়ি নির্মাণ, তৈরির কারণে, ফলাফল গুলি খুবই মারাত্মক এবং সুদূরপ্রসারী হচ্ছে। যথা–
  • (১)বন্যা ও খরার প্রবণতা বৃদ্ধি: ক্ষয়জাত মাটি সঞ্চয়ের ফলে যে অগভীর খাল গুলিতে বর্ষার জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ফলে বন্যা দেখা যায়।
  • (২) ভূমিধসের পরিমাণ বৃদ্ধি: অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পাহাড়ের ঢালে রাস্তাঘাট নির্মাণ, ঝুম চাষ, এবং ডিনামাইট ফাটানো ফলে, ও অন্যান্য খনিজ উৎপাদনে ফলে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে এবং পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধসের পরিমাণও ক্রমাগত বাড়ছে। নদী পাড়ে নদীর জলোচ্ছ্বাসের কারনে ও সমুদ্র তরঙ্গের আঘাতে ভূমিধস দেখা যায়।
  • (৩) খাল ও নদীতে অধিক পলি সঞ্চয়: বৃক্ষ ছেদন, খনিজ উত্তোলন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, প্রভৃতির কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত মাটি জলপ্রবহ দ্বারা প্রবাহিত হওয়ার পর কোন নদী বা জলসায় এ জমা হতে থাকে। এবং মাটি ক্ষয় যত বৃদ্ধি পায় এই পুলির সঞ্চয়ের পরিমান তত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে নদী, জলাশয়, খাল ধীরে ধীরে অগভীর হয়ে যায়।

উর্বরতা উর্বরতা হ্রাস:

 বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবিক কার্যকলাপের ফলে জলপ্রবাহ দ্বারা ভূপৃষ্ঠের উপর চাদর ক্ষয়ের মাধ্যমে মাটির উপরের স্তরের অপসারণ হয় তাহলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। এবং মাটির বিভিন্ন খনির্য পদার্থ গুলি এক স্থান থেকে থেকে অন্য স্থানে প্রবাহিত হওয়ার কারণে মাটি অনুর্বর হয়ে যায়।

4.5 / 5

- (24 votes)