সূচিপত্র

ভূপৃষ্ঠে বায়ুর চাপের তারতম্যের প্রধান কারণ গুলি ব্যাখ্যা কর:

পৃথিবীতে বেষ্টন করে থাকার চাদরের ন্যায় বায়ুর যে ওজন বা চাপ পৃথিবীর উপর চাপ সৃষ্টি করে তাকে বায়ুর চাপ বলা হয়। এবং এ বায়ুর চাপ সমুদ্রপৃষ্ঠে বেশি দেখা যায় প্রায় ১০১৩.২ মিলিবার। বায়ুর চাপ দুই ধরনের হয় যথা উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ।

বায়ুচাপের তারতম্যের কারণ:

পৃথিবীপৃষ্ঠে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কারণে বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে। বায়ুর চাপের তারতম্যেরকারণগুলি হলো—বায়ুতে উষ্ণতার তারতম্য: যদি বায়ু উত্তপ্ত হয় তাহলে প্রসারিত এবং হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়, এবং এর ফলে বায়ুর চাপ এবং ঘনত্ব কমে যায়। বিপরীত দিকে বায়ুর উষ্ণতা কমে গেলে বায়ু আয়তনে খুবই সংকুচিত হয়ে ভারী আকার ধারণ করে। বায়ুতে ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলে বায়ুর চাপের বৃদ্ধি ঘটে। এবং এর ফলে বায়ুর বায়ুর উষ্ণতা এবং বায়ুর চাপের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। বায়ুমন্ডলে উষ্ণতা বাড়লে বায়ুর চাপ কম হবে, এবং উষ্ণতা কমলে বায়ুর চাপ বাড়ে।

জলীয় বাষ্পের তারতম্য:

বায়ুমন্ডলে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে সেটা বায়ুর চাপ ই নিয়ন্ত্রণ করে। জলীয় বাষ্প সাধারণ বায়ুর তুলনায় খুবই হালকা হয়। বায়ুতে যদি জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে নাইট্রোজেনের তুলনায় হাইড্রোজেনে পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে বায়ুর চাপ কমে যায়। এবং এই কারণেই বর্ষাকালে বায়ুমন্ডলে বায়ুর চাপ কম থাকে। উদাহরণ— যেমন শীতকালে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ থাকে না বলে, এর ফলে বায়ুর চাপের পরিমাণ খুবই বেশি হয়। এবং এ সময় শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়। এবং বর্ষাকালে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে বায়ুমন্ডলে বায়ুর চাপ কম থাকে।

উচ্চতা:

বায়ুমণ্ডলের ৯০% উপাদানই প্রায় বায়ুমণ্ডল থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার উচ্চতা মধ্যে থাকে, এর ফলে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন অঞ্চলে বায়ুর চাপ বেশি হয়। এবং আমরা বায়ুর চাপ অনুভব করি। এবং যদি আমরা ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উচ্চতা পর্যন্ত উপরের দিকে উঠি না কেন বায়ু ঘনত্ব এবং চাপ ততই কমতে থাকে। যেমন প্রতি ২৭৪মিটার উচ্চতায় ৩৪ মিলিবার বায়ুর চাপ কমতে থাকে। এ কারণে জন্য সমভূমি অপেক্ষা পার্বত্য অঞ্চলে বায়ুর চাপ কম থাকে।

পৃথিবীর আবর্তন গতি:

পৃথিবী আবর্তন গতির ফলে পৃথিবীতে ক্লোরিওলিস বলের ফলে কেন্দ্রবহিমুখী ও কেন্দ্রমুখী বল সৃষ্টি হয়। এবং এই বলের প্রভাবে উত্তর গোলার্ধে বায়ুর ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বায়ু বাম দিকে প্রবাহিত হয়, এবং এইসব কারণে জন্যই পৃথিবীপৃষ্ঠের উপর বায়ুর তারতম্যের প্রভাব দেখা যায়। উদাহরণ— যেমন নিরক্ষীয় অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন গতি বেশি হওয়ার জন্য সেখানে নিম্নচাপ বলয় দেখা যায়। এবং দুই মেরু যথা- উত্তরমেরু এবং দক্ষিণমেরু অঞ্চলে আবর্তন গতি বেশি হওয়ার জন্য উচ্চচাপ পরিলক্ষিত হয়।

বায়ুমন্ডলে ঘনত্ব বা গভীরতা:

পৃথিবীপৃষ্ঠে বায়ুমন্ডলে ঘনত্ব সর্বত্র একই নয়, কোথাও বেশি আবার কোথাও কম। বায়ুমন্ডলে যেখানে ঘনত্ব বেশি সেখানে গভীরতা বেশি হয়। এবং সেখানে বায়ুর চাপ ও বেশি থাকে। এবং কম ঘনত্ব যুক্ত অঞ্চলে বায়ুর চাপ ও কম থাকে। উদাহরণ— যেমন উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চল থেকে তিব্বত মালভূমির বায়ু ঘনত্ব বা গভীরতা কম। এই জন্য সেখানে বায়ুর চাপ ও কম।

বায়ুমন্ডলে গঠনকারী উপাদান:

বায়ুমন্ডলে যেসব স্থানে বায়ুর উপাদান যথা- বালুকণা, ধূলিকণা, কার্বন কণার মতো ভারী উপাদান থাকে সেইসব অঞ্চলে বায়ুর চাপ অধিক হয়। এবং হাইড্রোজেন, ওজোন, হিলিয়াম, বিভিন্ন হালকা গ্যাস যুক্ত অঞ্চলে বায়ুর চাপ কম হয়।

সমুদ্র স্থলভাগের বিন্যাস:

বায়ুর চাপ অনেকটা পৃথিবীর জলভাগ ও স্থলভাগের বন্টনের উপর নিয়ন্ত্রণ করে। এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর দিয়ে যেসব বায়ু প্রবাহিত হয় সেই বায়ু সাধারণত হালকা ও আদ্র প্রকৃতি হয় এবং এই আর্দ্রতা যুক্ত বায়ুর চাপ ও কম হয়। বিপরীত দিকে স্থলভাগের উপর দিয়ে যেসব বায়োত হয় তা ভারী ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়, ফলে চাপ খুব বেশি থাকে।

অভিকর্ষজ টান:

পৃথিবীপৃষ্ঠে অভিকর্ষজ টানের প্রভাবেও বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে। পৃথিবী কোন স্থান কেন্দ্রের যত কাছাকাছি অবস্থান করবে সেই স্থানে অভিকর্ষজ টান ততই বেশি থাকবে। পৃথিবী অভিগত গোলক হওয়ার ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুর চাপ কম এবং মেরু অঞ্চলে বায়ুর চাপ বেশি পরিলক্ষিত হয়।

4.5 / 5

- (24 votes)