সূচিপত্র

মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহের দমনের পরে ভারতের মুঘল শাসন এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটলে, এর ফলে ভারতের শাসন ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার হাতে ভারতের শাসনভার তুলে দেওয়া হয়। মহারানী ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধি লর্ড ক্যানিং এলাহাবাদে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর একটি ঘোষণা পত্র প্রকাশ করেছিলেন যা "মহারানীর ঘোষণা পত্র" নামে পরিচিত। রানী ভিক্টোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডার্বি এই ঘোষণা পত্রটি রচনা করেন।

মহারানীর ঘোষণাপত্র

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে হওয়া বিদ্রোহের পরে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে ভারতের শাসনভার রাখতে চাইছিল না। এর ফলস্বরূপ, ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে "Act for Better Government in India" নামে একটি আইন পাস করা হয় এবং এই আইনের মাধ্যমে ভারতের শাসনভার মহারানী ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়।

মূল বক্তব্য

মহারানীর ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে –

  1. ধর্মীয় ও সামাজিক স্বাধীনতা: ভারতবাসীর বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবে না।
  2. চাকরিতে অংশগ্রহণ: জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যোগ্যতাসম্পন্ন সকল ব্যক্তি সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হতে পারবেন।
  3. স্বত্ববিলোপ নীতি: স্বত্ববিলোপ নীতি প্রত্যাহার করা হবে এবং দেশীয় রাজারা দত্তক পুত্র গ্রহণ করতে পারবেন না।
  4. সম্রাজ্য বিস্তার নীতি ত্যাগ: ভারতের সম্রাজ্য বিস্তারের নীতি ত্যাগ করা হবে।
  5. দেশীয় রাজার অধিকার: দেশীয় রাজাদের সঙ্গে কোম্পানির স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো মেনে চলতে হবে।

এই শাসনের অধীনে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রায় ১০০ বছর ধরে (১৭৫৭-১৮৫৭) ভারতে অপশাসন চালিয়েছিল। মহারানীর ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে এই অপশাসনের উপর মধুর প্রলেপ দেওয়া হলেও প্রতিশ্রুতি পালনে ঘাটতি ছিল। ডঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদার এই ঘোষণাপত্রকে "প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অধ্যায়" বলে অভিহিত করেছিলেন।

মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য

মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য নিম্নরূপ:

  1. বিদ্রোহের কারণ উপলব্ধি: ব্রিটিশ সরকার বিদ্রোহের কারণগুলো অনুধাবন করে সেগুলোর প্রতিকার করার চেষ্টা করেছিল, যদিও এতে সম্পূর্ণ সফল হয়নি।
  2. দেশীয় রাজন্যদের অধিকার প্রদান: দেশীয় রাজন্যদের শাসনের অধিকার প্রদান করা হলেও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিরোধ ও ভাইসরয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কারণে সমস্যার সমাধান সম্পূর্ণ হয়নি।
  3. সামন্ততান্ত্রিক রাজ্যের উপর গুরুত্ব: সামন্ততান্ত্রিক দেশীয় রাজ্য এবং ভূস্বামী শ্রেণীর আনুগত্যের উপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও শিক্ষিত শ্রেণীর দাবি উপেক্ষিত ছিল।
  4. সাম্রাজ্যবাদী শাসনের চরিত্র অপরিবর্তিত: ঘোষণাপত্রে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বহিরঙ্গী পরিবর্তন হলেও মূল চরিত্র অপরিবর্তিত ছিল।

এই কারণগুলো এবং অন্যান্য বিষয়ে ঐতিহাসিক বিপিনচন্দ্র পালের মতে, এই ঘোষণাপত্র ছিল "রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজি" এবং ডঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদার একে "প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অধ্যায়" বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

4.5 / 5

- (24 votes)