১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহী প্রত্যক্ষ কারণ
লর্ড ক্যানিং এর শাসনকালে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সিপাহী, রাজা, মহারাজা এবং জনগণের অসন্তোষের প্রেক্ষিতে যে বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়েছিল, তা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহ প্রথমে সিপাহীদের দ্বারা শুরু হলেও তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ
- ইনফিল্ড রাইফেল: এক ধরনের বন্দুকের কার্তুজ বা টোটা মোমে মোড়ানো থাকত। সিপাহীরা মোম কেটে ব্যবহার করত, এবং গুজব ছড়ায় যে এতে গরু ও শূকরের চর্বি মাখানো থাকে, যা ধর্মীয় কারণে হিন্দু ও মুসলমান সিপাহীদের মধ্যে অস্বীকৃতি ও অসন্তোষের জন্ম দেয়। এর ফলে তারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
মঙ্গল পান্ডের বিদ্রোহ
বাংলার ব্যারাকপুরের সেনা ছাউনিতে ইনফিল্ড রাইফেল সংক্রান্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে মঙ্গল পান্ডে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং পরিণামে তার ফাঁসি হয়।
মিরাটে বিদ্রোহ
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মিরাট সেনানিবাসের ৯০ জন সিপাহী ইনফিল্ড রাইফেলের চর্বি মাখানো কার্তুজ ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানায়। এর ফলে ৮৫ জনকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলে মিরাটে সিপাহীরা ১০ মে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
উপসংহার
কার্তুজের ব্যবহারের প্রেক্ষিতে সিপাহীদের মধ্যে যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল, তারই বহিঃপ্রকাশ ছিল এই বিদ্রোহ।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ
লর্ড ক্যানিং-এর শাসনকালে ভারতে বিস্তৃত অঞ্চলে এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে কর্মরত সিপাহীরা বিদ্রোহ শুরু করলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এতে যোগ দেয়। তবে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসের মধ্যে বিদ্রোহ সীমিত হয়ে যায়।
বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণসমূহ
- সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাব: সিপাহীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংগঠন ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না। এ কারণে বিদ্রোহ সফল হতে পারেনি।
- আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা: বিদ্রোহটি দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বাংলা, বিহার, অযোধ্যা ও আশেপাশের অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল।
- নেতৃত্বের অভাব: সর্বভারতীয় স্তরে কোন কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন না; ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ, কুনওয়ার সিং প্রমুখ নিজ নিজ অঞ্চলে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
- ইংরেজদের রণনৈপুণ্য: ইংরেজ সেনাপতি হ্যাভলক, নিকলসন প্রমুখ উন্নত রণকৌশলে বিদ্রোহ দমন করেন।
- দেশীয় শক্তির বিরোধিতা: ভারতীয় অনেক রাজা ইংরেজদের পক্ষে বিদ্রোহ দমন করেন।
উপসংহার
উৎসাহ ও উদ্দীপনা সত্ত্বেও ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের ফলাফল
কোম্পানি শাসনের অবসান
১৮৫৭ বিদ্রোহের পর ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতের শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নেয়।
আইন পরিষদে ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্তি
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে Indian Council Act পাশ হয়, যা ভারতীয়দের প্রশাসনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়।
সামরিক সংস্কার
ভারতের সেনাবাহিনীতে সামরিক জাতি ও অসামরিক জাতি নামে দুটি ভাগ করা হয়। সামরিক জাতিতে শিখ, পাঠান, গোর্খা, রাজপুত এবং অসামরিক জাতিতে বাঙালি, বিহারী প্রমুখ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
উপসংহার
১৮৫৭ বিদ্রোহের পর কিছু দাবিদাওয়া ব্রিটিশ সরকার মেনে নিলেও বেশিরভাগই ছিল কেবল আশ্বাস, যা ভারতবাসীর কাছে পরবর্তীতে স্পষ্ট হয়ে যায়।
- (24 votes)
0 মন্তব্যসমূহ